জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন | NCTB BOOK

বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে । জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতি ও আদর্শের প্রতি আস্থাশীল রয়েছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে তার নানা সমস্যা মোকাবেলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা পেয়েছে । আবার জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে । কার্যত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের গভীর ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো ।

♦ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে জাতিসংঘ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি মানবিক সাহায্য দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল । স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনেও জাতিসংঘ সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল ।

♦ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয় । ফলে বাংলাদেশ অতি অল্প দিনের মধ্যে জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্যের আস্থাভাজন হয়ে উঠে । বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দুবার নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে যা দেশের জন্য এক বিরল সম্মান । এছাড়া বাংলাদেশ জাতিসংঘের অন্যান্য পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে ।

♦ জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অকৃত্রিম বন্ধুর মতো কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংস্থা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুষ্টি, যোগাযোগ, শিশু মৃত্যু হ্রাস, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, বিজ্ঞান, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রগতি অর্জনে যথেষ্ট সাহায্য করছে। জাতিসংঘ আমাদের ‘ভাষা ও শহীদ দিবস' ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাংলা ভাষাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে । জাতিসংঘের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে ।

♦ ১৯৯১ সালে মিয়ানমার হতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে বিপুলভাবে সাহায্য করায় বাংলাদেশ সে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ ছিল যা নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে । ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের এক রায়ে এ বিরোধের নিষ্পত্তি হয় এবং এক বিশাল সমুদ্রসীমার উপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ।

♦ এভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের দেশকে সাহায্য করে যাচ্ছে। বাংলাদেশও জাতিসংঘ সনদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল থেকে এর বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান করে এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব শাস্তি রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ।

Content added || updated By
Promotion